শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

মুরগির খাদ্য বানিয়ে যেভাবে পঙ্গপাল মোকাবেলা করছে পাকিস্তান

আমার সুরমা ডটকম ডেক্স:

করোনায় বিধ্বস্ত পাকিস্তানের জন্য নতুন বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছিল পঙ্গপাল। কৃষি নির্ভর দেশটির খাদ্য সরবরাহের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছিল এই পোকামাকড়ের ঝাঁক। তবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিচক্ষণতায় এই পঙ্গপালই উপার্জনের পথ তৈরি করে দিয়েছে পাকিস্তানিদের জন্য। মুরগির জন্য উপাদেয় খাবার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এগুলো।

পাকিস্তানে গত ২৫ বছরের মধ্যে পঙ্গপালের এবারের হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এগুলো জমির ফসল খেয়ে সাফ করে ফেলায়, দরিদ্র কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তাদের সহযোগিতা করতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাঞ্জাব প্রদেশে ‘রুটি-ঝুড়ি’ নামে একটি পাইলট প্রকল্প সম্প্রসারণ করতে অনুমতি দিয়েছিলেন। এই প্রকল্পের আওতায় গ্রামবাসীরা পঙ্গপাল মেরে শুকিয়ে হাঁস, মুরগির খামারে খাবার হিসাবে যোগান দিয়ে নগদ অর্থ উপার্জন করা শুরু করে। পাকিস্তানের খাদ্য মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা মুহাম্মদ খুরশিদ এবং বায়োটেকনোলজিস্ট জোহর আলি এই কর্মসূচিটি শুরু করেন। তারা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেন থেকে তারা এ বিষয়ে অনুপ্রেরণা লাভ করেন। সেখানে কর্তৃপক্ষ দুর্ভিক্ষের কারণে মানুষকে প্রোটিন সমৃদ্ধ পঙ্গপাল খেতে উৎসাহিত করেছে।

তারা প্রথমে পাঞ্জাবের ওকারা জেলায় এই কর্মসূচি শুরু করেন। সেখানকার কৃষকরা এমন কোনও কীটনাশক ব্যবহার করেননা, যা খাবার হিসাবে পঙ্গপালগুলোকে বিষাক্ত করে ফেলতে পারে। এ বিষয়ে খুরশিদ বলেন, ‘আমাদের প্রথমে শিখতে হয়েছিল এবং তারপরে কীভাবে পঙ্গপালগুলো ধরতে হয় তা স্থানীয়দের শিখিয়েছিলাম। তাদের বিরুদ্ধে জাল কোন কাজে লাগে না।’ তারা বলেন, ‘এই প্রজেক্টটি যখন হাতে নেয়া হয়, তখন অনেকেই তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছিল। কারণ মানুষ ভাবতে পারেনি যে, এ পোকা ধরে হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবে বাজারে বিক্রি করা যাবে।’

প্রতি কেজি পঙ্গপালে ২০ রুপি দরে বিক্রি হয়। স্থানীয়রা সারা রাত ধরে সেগুলো সংগ্রহ করে। কারণ, রাতের বেলা পঙ্গপালগুলো ঝাঁক বেধে শুয়ে থাকে। এই পোকামাকড়ের ক্ষতিগ্রস্থ এক কৃষক জানান, তিনি এবং তার ছেলে এক রাতে পঙ্গপাল ধরে ১ হাজার ৬০০ রুপি আয় করেছেন। এটি তার আর্থিক ক্ষতি পূরণে সাহায্য করেছে। বর্তমানে শত শত কৃষক এই পঙ্গপাল শিকারে যোগ দিয়েছেন। এভাবে সেখানে ২০ টন পঙ্গপাল ধরা পড়ার পরে, প্রোগ্রামটি স্থগিত করা হয়। এই প্রজেক্টের ফলাফলে উৎসাহিত হয়ে মন্ত্রণালয় এখন এটি অন্যান্য জায়গায় প্রসারিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই পঙ্গপালগুলো পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রাণী-খাদ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হাই-টেক ফিডস কিনে নেয়। তাদের তৈরি মুরগির খাবারে ১০ শতাংশ হারে এই পোকামাকড়ের গুড়া মিশিয়ে বিক্রি করে। প্রথমে ৫০০ ব্রয়লার মুরগির উপরে এই খাবার পরীক্ষা করার পরে সংস্থাটির জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ আতাহার জানান, ‘খাবার নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি, পোল্ট্রি ফিডে পঙ্গপাল ব্যবহারের ভাল সম্ভাবনা রয়েছে।’ এই প্রকল্পটি পঙ্গপাল থেকে ফসল রক্ষা করতে না পারলেও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য উপার্জনের একটি নতুন উপায় তৈরি করেছে এবং পঙ্গপাল-নিধনে কীটনাশকের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে।

চলতি বছর পূর্ব আফ্রিকা, আরব উপদ্বীপ এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে পঙ্গপালের ঝাঁক ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, আসন্ন বর্ষাকালে বৃষ্টি আসার সাথে সাথে তাদের সংখ্যা বিস্ফোরিত হবে। সংকট এতটাই মারাত্মক যে পাক সরকার দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ২৫ শতাংশ ফসল নষ্ট হলে পাকিস্তানের প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে শস্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে যা, খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। সূত্র: এএফপি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com